সাবেত আহমেদ, সাবরীন জেরীন: [২] আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “নির্বাচন বাতিলের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনেকে আন্তর্জাতিকভাবেও জড়িত। তারা বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করছে। আমরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেব।”

[৩] শনিবার সকালে টুঙ্গিপাড়ায় সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

[৪] আওয়ামী লীগ সভাপতি টুঙ্গিপাড়াবাসীর সমর্থনকে নিজের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর দায়িত্ব¡ নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

[৫] তিনি বলেন, আমি ৩ শ’ আসন দেখি। আর আমাকে দেখেন আপনারা। কাজেই এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া, আমার মত একজন সৌভাগ্যবান প্রার্থী বাংলাদেশে আর নেই। এটা হলো বাস্তবতা। তার কারণ আপনারা। আপনারাই আমার দায়িত্ব নেন। আপনারা আমাকে দায়মুক্ত কওে রেখেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করতে পারছি।

[৬] “আমি একজন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, ভোট দেবেন তো?” তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে চিৎকার করে জনতা দুই হাত তুলে ভোট প্রদানের সম্মতি জানায়। “আমি জানি আপনারা দেবেন,” প্রতিউত্তর দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

[৭] প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সোয়া ১১টায় সমাবেশস্থলে পৌঁছান এবং সমাবেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। সমাবেশটি একটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

[৮] প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে বোমা মেরে ফিলিস্তিনে নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে।

[৯] রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে (এখানে বাংলাদেশে) একই কাজ করেছে তারেক জিয়া। বাংলাদেশে এ সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না।

[১০] শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ যদি দিন দেয় আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে-ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষ মারবে সেটা হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে, ধরে এনে শাস্তি দেব।

[১১] নির্বাচন বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ২০০৭-এ আপনারা দেখেছেন কী করেছে। তার আগে তো জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া, এরাই তো ছিল, মানুষের তো কোনো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি! মানুষ তো যে অন্ধকার-অন্ধকারেই ছিল।

[১২] টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রেড ক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ।

[১৩] জনসভায় সভাপতিত্ব করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। সঞ্চালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ।

[১৪] গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার জনসভা শেষে কোটালিপাড়ায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত আরেকটি মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন ভোটার ও তরুণদের তার দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

[১৫] তিনি বলেন, “যারা যুবসমাজ ও তরুণ সমাজ এবং প্রথমবার যারা ভোটার হবেন শুধু কোটালীপাড়া টুঙ্গিপাড়া নয় সারা বাংলাদেশের জন্য আমার আহ্বান-নতুন ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করার সুযোগ করে দিয়ে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ায় তাদের সাহায্য করতে হবে।” তিনি বলেন, “তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।”

[১৬] আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ-  সকল ধর্মের মানুষ তার সমান অধিকার নিয়ে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, সেটাই আমরা নিশ্চিত করেছি এবং সেটাই নিশ্চিত থাকবে।

[১৭]  তিনি বলেন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করছে তাদেরও একদিন উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে। তারাও শাস্তি পাবে একদিন। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেউ যদি নাক গলাতে আসে আমরা সেটা মেনে নেব না, বাংলাদেশ  কখনো মানে নাই। 

[১৮] সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।

[১৯] মাদারীপুরের কালকিনিতে সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত আরেকটি মহাসমাবেশে শেখ হাসিনা তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট চেয়ে বলেছেন, একমাত্র নৌকাই পারে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে।

[২০] তিনি বলেন, “আমি নৌকায় ভোট চাই, কারণ, এটিই একমাত্র দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। নৌকাই দেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার।”

[২১] প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় সমবেশস্থলে এসে পৌঁছান, যা ততক্ষণে মানব সমুদ্রে পরিণত হয়।

[২২] অওয়ামী লীগ সভাপতি মাদারীপুরের তিন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জনগণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং নৌকার পক্ষে ভোট চান। তিনি ভোটারদের সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বলেন।

[২৩] প্রধানমন্ত্রী সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ্মা সেতু নির্মাণে অবদানের জন্য শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

[২৪] তিনি বলেন, মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবাদে তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে । বিশ^ ব্যাংকের দুর্নীতির ভূয়া অভিযোগ পরবর্তীতে কানাডার ফেডারেল কোর্টেও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।

[২৫] কোন নাম উল্লেখ না করে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যাংকের এমডি’র পদ ধরে রাখার জন্য এক ব্যক্তি এই সকল ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে ছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

[২৬] সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাহজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। সম্পাদনা: ইকবাল খান